কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুতে ছিল শিক্ষার্থী ও যুবকদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি ন্যায্য আন্দোলন, তবে সরকারের ব্যর্থতার কারণে এটি ধীরে ধীরে একটি গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই অভ্যুত্থানের ফলে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর দলের মন্ত্রী-এমপিদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যান, আর অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হকার শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমানের গ্রেপ্তার। তিনি আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং শেখ হাসিনা সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বুধবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তিনি বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে আছেন। যদিও তিনি যে মামলায় রিমান্ডে আছেন, সেই মামলায় তার নাম উল্লেখ করা হয়নি; তাকে অজ্ঞাতনামা আসামিদের মধ্যে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, সালমান এফ রহমানের অপরাধ শুধুমাত্র হত্যা মামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি শেয়ারবাজারসহ দেশের অর্থনৈতিক খাতে নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন। তার এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্যই তাকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা মামলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ডিবি হেফাজতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা অতীত সরকারের নানা অপকর্ম এবং দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত।
জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনেই সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, এই দুই নেতার অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই দেশে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ডিবির এক কর্মকর্তা তাকে বলেন, ‘আপনার অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই দেশের এই অবস্থা।’ তখন তিনি নির্বিকার থাকেন এবং কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাননি।
ডিবি পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সালমান এফ রহমান মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন এবং তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে এত দ্রুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে। এই অবস্থা তার জন্য অত্যন্ত শকিং এবং কষ্টদায়ক। রিমান্ডে থাকাকালীন তাকে বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে, যার ফলে তিনি অনেক বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলছেন এবং বহু অজানা তথ্য প্রকাশ করছেন।
ডিবি কর্মকর্তারা মনে করছেন, সালমান এফ রহমানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো সরকারের ভেতরে চলমান নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরছে, যা ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, তিনি যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন, তার প্রমাণ ও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা তদন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সালমান এফ রহমানের এই গ্রেপ্তার এবং তার থেকে পাওয়া তথ্যগুলো দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও উত্তপ্ত করে তুলেছে। জনসাধারণের মধ্যে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে, এবং সবাই অপেক্ষা করছে, দেখার জন্য যে কীভাবে এই সমস্ত ঘটনা পরবর্তীতে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলবে।