উপমহাদেশের বিতর্কিত ধর্মীয় রাজনীতিক আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর ১৯৫৯ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পাকিস্তানে প্রথমবার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতার কারণে ১৯৬৪ সালে জামায়াতকে আবার নিষিদ্ধ করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে বিরোধিতাকারী জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন দল গঠন করে। তখন জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের নাম ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ, যা পরে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে পরিচিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে জামায়াতসহ সব ধর্মভিত্তিক দল, সংগঠনের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়। তখন গোলাম আযমসহ দলটির শীর্ষ নেতারা দেশত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতায় এসে তিনি জামায়াতকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনেন এবং যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে ফেরান। ১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে গোলাম আযম জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব নেন।
এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসন পায় এবং সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ১৭ আসন পায় এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভায়ও জায়গা পায়। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে দুটি আসন পেয়ে এরপর নিবন্ধন হারায় জামায়াত, ফলে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি।
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের আওতায় আনলে জামায়াতে ইসলামীকেও নিবন্ধন দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। চার কারণে জামায়াত নিবন্ধন পেতে পারে না বলে রিটে উল্লেখ করা হয়। প্রথমত, জামায়াত জনগণকে সব ক্ষমতার উৎস বলে মনে করে না এবং আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাও স্বীকার করে না। দ্বিতীয়ত, জামায়াত একটি সাম্প্রদায়িক দল। তৃতীয়ত, জামায়াতের শীর্ষ পদে কখনো কোনো নারী বা অমুসলিম যেতে পারে না। চতুর্থত, জামায়াতের বিদেশে শাখা রয়েছে।
হাইকোর্টের রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল রাখে। হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত টানা দুই দিনের হরতাল দেয়, যেখানে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে ন্যায়বিচারের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়, যা জামায়াত তাদের দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করত। একাত্তরে ভূমিকার জন্য জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই জামায়াতের আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়।
এ পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সাধারণ জ্ঞান এবং দালিলিক প্রমাণাদি থেকে স্পষ্ট যে, জামায়াত এবং এর অধীন সংগঠন সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী একটি ক্রিমিনাল দল হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে কাজ করেছে।