কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই কর্মসূচির আওতায় হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত সবকিছু বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বলেছেন, “শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে” এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
জরুরি সেবার আওতায় গণমাধ্যমের গাড়ি ও সংবাদপত্র পরিবহনের গাড়ি বাধাহীনভাবে চলতে পারবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, “শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা ও কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আগামীকাল ১৮ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করছি। শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না।”
সারা দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান আসিফ মাহমুদ। তিনি আরও লেখেন, “আমাদের অভিভাবকদের বলছি, আমরা আপনাদেরই সন্তান। আমাদের পাশে দাঁড়ান, রক্ষা করুন। এই লড়াইটা শুধু ছাত্রদের না, দলমত-নির্বিশেষে দেশের আপামর জনসাধারণের।”
কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম প্রথম আলোকে বলেন, কমপ্লিট শাটডাউন বলতে তাঁরা ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ বুঝিয়েছেন। তিনি আরও জানান, গণমাধ্যমের গাড়ি ও সংবাদপত্র পরিবহনের গাড়ি জরুরি সেবার আওতায় অবরোধের আওতা থেকে মুক্ত থাকবে, অর্থাৎ এগুলো চলতে পারবে।
গতকাল দিনভর উত্তপ্ত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুপুর থেকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য সাঁজোয়া যান নিয়ে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কফিনমিছিল শুরু করামাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলা চালায়। এ সময় দুই পাশ থেকে সম্মিলিত আক্রমণের মধ্যে পড়ে আহত হন কয়েকজন নারীসহ অন্তত ২০ শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন ১০ জন সাংবাদিকও। এর বাইরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হামলায় আহত হয়ে গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন আরও ৩৫ জন।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিনেও রাজধানীসহ দেশের অন্তত ১০টি জেলায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া অন্তত ১০টি জায়গায় সড়ক ও মহাসড়ক এবং দুই জায়গায় রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা।