বিতরণ কোম্পানি লোকসান করলেও গ্রাহক পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।
বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিভাগে বাজেট নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির শর্ত দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দু’বার দাম বাড়ানো হয়েছে। এটি একটি নিয়মিত সমন্বয়। সরকার চাইলে আমরা দাম বৃদ্ধি করি। তবে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না।
ঝড় ও বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের ৩০ হাজার পোল বিনষ্ট হয়েছে এবং সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে সবক’টি সাবস্টেশন পানির নিচে চলে গেছে। এসব অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণের ব্যবস্থা সাজানোর চেষ্টা করছি যেন ঝড় ও বন্যার মধ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে এবং আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
গ্যাসের স্বল্প চাপ বিষয়ে তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ১৫ জুলাই টার্মিনালটি পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।
আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহেশখালী থেকে আটটি পাইপলাইন গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে এবং চীন সফরে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ও বিতরণব্যবস্থার কিছু প্রকল্পের চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হবে। মোট বিনিয়োগ এক বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যে গ্যাস-সংকট দূর করতে আরও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে এবং স্থলভাগে ও অগভীর সমুদ্রে নতুন কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী মাসের শেষের দিকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই হতে পারে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম আট টাকা হবে, যা ২০ বছর একই থাকবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০ ভাগ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে, কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। ২৫০০ মেগাওয়াটের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে এবং আরও ছয় হাজার মেগাওয়াট পাইপলাইনে রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে ১০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ডাকা দরপত্রের সময় বাড়ানো হচ্ছে, তবে কতদিন বাড়ছে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি।