আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) এবং এ আদালতের যাবতীয় কর্মকাণ্ড রাশিয়ায় নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব উঠেছে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমায়। পার্লামেন্টের স্পিকার ভিয়েচেস্লাভ ভলোদিন নিজে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। খবর রয়টার্সের।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ভিয়েচেস্লাভ ভলোদিন স্থানীয় সময় শনিবার ডুমার অধিবেশনে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির সাম্প্রতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রসঙ্গে বলেন, রাশিয়ায় আইসিসির যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এ সংস্থাকে যারা সহায়তা ও সমর্থন করবে— তাদের শাস্তির বিধান রেখে পার্লামেন্টে আইন পাস করা উচিত।
পরে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্টও দেন ডুমার স্পিকার। সেখানে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অভ্যন্তরে আইসিসির যে কোনো কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আইন প্রণয়ন করা এখন জরুরি।
ইউক্রেনের ‘অধিকৃত বিভিন্ন অঞ্চল’ থেকে ১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি শিশুকে রাশিয়ায় পাচারের অভিযোগে গত শনিবার পুতিন এবং রাশিয়ার শিশুবিষয়ক কমিশনের কমিশনার মারিয়া লেভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি।
প্রায় ১৩ মাস আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শিশু পাচারের এ অভিযোগ জানিয়েছিল। সেই অভিযোগ আমলে নিয়েই পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এটি ছিল ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানা।
তবে এ পরোয়ানা জারির পর গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। পরোয়ানা জারির প্রথম দিনই দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এ পরোয়ানাকে ‘টয়লেট পেপার’ বলে আখ্যা দেন।
দুদিন পর ২০ মার্চ মস্কোর আদালতে আইসিসির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা রাশিয়ান সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ হুমকি দেন—পুতিনকে গ্রেফতার করা হলে সেটি হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
এরপর দিন শুক্রবার আইসিসিকে রাশিয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানালেন ডুমার স্পিকার ভিয়েচেস্লাভ ভলোদিন।
রোম চুক্তির আওতায় ২০০২ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ শক্তিগুলো এ আদালতকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে আইসিসির ১২৩টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি দেশও রয়েছে।
ইউক্রেনও এখন পর্যন্ত আইসিসির সদস্য নয়, তবে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর বিশেষ বিবেচনায় কিয়েভকে বিচার চাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আইসিসি।