ফুলবাড়ীয়ার ঐতিহ্যবাহী গুটি খেলা ১৪ জানুয়ারী !
পূব্বা কইরে………….হেইয়্যও
গুটি নিলো গা রে ………..হেইয়্যাও
তাড়াতাড়ি আয় রে……….হেইয়্যও
উত্তইরা কইরে …………হেইয়্যও
দক্ষিণা কইরে………..হেইয়্যও
এই স্লোগানগুলোর মাধ্যমেই শুরু হয় প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হোম গুটি খেলা । এ স্লোগানগুলোর সাথে তালে তাল মিলিয়ে হাজার হাজার মানুষের জোয়ার শুরু হয়ে যায় । তরুণ , যুবক , বৃদ্ধা মিলে হাজার হাজার মানুষ মিছিল মিছিল দলে দলে যোগদান করে ৪০ কেজি ওজনের পিতলের গোলাকার এই বস্তুটিকে ঘিরে । চতুর্পাশ থেকে হাজার হাজার মানুষের চক্রাকারে শক্তি প্রদর্শন ও ধাক্কাধাক্কি ঠেলাঠেলি করে ছোট্ট এই গুটিটিকে নিজেদের করে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলে বিকাল ৩ টা থেকে রাত ১১/১২টা পর্যন্ত গুটি গুম হওয়ার আগ পর্যন্ত । চারটি পক্ষ যথাক্রমে উত্তর, দক্ষিণ পূর্ব, পশ্চিম দিকে বিভক্ত হয়ে খেলায় অংশ গ্রহন করে । কয়েকটি গ্রাম , এলাকা বা ইউনিয়ন মিলে একটি দিক বা পক্ষ হয়ে থাকে । পিতলের গুটিটি কোন পক্ষ নির্দিষ্ট সীমা পেরিয়ে গুম করে ফেললে বা লুকিয়ে ফেললে তারা জয়ী হয় আর তখন খেলার ইতি ঘটে ।
প্রতিবছর বাংলা পৌষ মাসের শেষদিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার লক্ষীপুর- দশমাইল এলাকায় বড়ই আটা স্থানে আড়াইশো বছরের পুরনো গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যবাহী হোম গুটি খেলাটি অনুষ্টিত হয় । খেলা উপলক্ষে আশপাশের কয়েক গ্রাম ব্যাপী ঘরে ঘরে উৎসব আমেজ বিরাজ করে । উৎসবকে ঘিরে জায়গায় জায়গায় গরু জবাই,ঘরে ঘরে হরেক রকমের পিঠা পায়েস , প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি আত্মীয়স্বজনদের আগমন এ যেন ঈদের আমেজকেও হার মানায় ! ঢাকাসহ দূর-দূরান্তে চাকরিরত এলাকার বাসিন্দারা এই একটি দিনের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন । এ যেন বাৎসরিক এক মিলনমেলা ।
খেলা শুরুর একমাস আগে থেকেই গ্রামে গ্রামে বাজারে বাজারে ব্যান্ড পার্টি,ঢোল ও বাদ্যবাজনার তালের সাথে নাচ গান খেলার প্রতি মানুষের আবেদন বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ । পিক আপ গাড়িতে করে সাউন্ড বক্সের সাথে ছোট ছেলেদের নাচানাচির মহড়া উৎসবে যোগ করে নতুন মাত্রা । মাসব্যাপী চলে দিক নির্ণয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের প্রতিক , নিশানা ও লাইটিং , ব্যানার, ফেস্টুন তৈরির কাজ । গ্রামে গঞ্জে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সকল জায়গায় চলে একই আলোচনা এবার গুটি যাবে কোন এলাকায় ।
বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারসহ ধনাঢ্য ব্যাক্তিরা তাদের নিজ নিজ পক্ষ থেকে খেলার পূর্বে গরু খাসি জবাই করে এলাকার লোকজনের জন্য খাওয়ার আয়োজন করে । শত শত খেলোয়ারদের মাঝে টি-শার্ট , জার্সি ও রঙ্গিন ফিতা বিতরণ করেন । গুটি আনার জন্য থাকে বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি ।
গুটি খেলা উপলক্ষে দুপাশে বসে বিশাল মেলা । সেখানে সার্কাস সহ থাকে বাচ্চাদের সকল প্রকার খেলনাসহ আতশবাজি ও হরেক রকমের খাবার সামগ্রী ।মেলায় বিকাল থেকে রাত অবধি ভিড় করে সব বয়সী নারী পুরুষ ।