২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতে ভোট প্রদান, এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে একটি দুর্ভেদ্য মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো। এই তিনটি নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণ ছিলো ন্যূনতম। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ বেশিরভাগ বিরোধীদল অংশগ্রহণ করেনি। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকেও নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করেছিলেন, যেখানে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ রাকিবউদ্দিন। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে দেওয়া হয়, যা ছিলো পুরোপুরি একটি পরিকল্পিত চাতুর্য। কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আয়োজিত হয়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে। শেখ হাসিনা নিজ দলের প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী করে প্রায় ৩০০ আসনে এমপি নির্বাচিত করেন। এই নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। এই নির্বাচনে সাধারণ মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি, এবং দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত হয় মাফিয়াতন্ত্র।
গত দেড় দশকে, দেশব্যাপী দুর্নীতি, অর্থ পাচার, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, দারিদ্র্যের মতো সমস্যাগুলি তীব্র আকার ধারণ করে। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে শেখ হাসিনা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কালাকানুন প্রণয়ন করেন। বাক স্বাধীনতা হরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা এবং গায়েবী মামলা করে মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত রাখা হয়।
এরপর সাধারণ ছাত্রদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ নামে শুরু হয় একটি বিদ্রোহ, যা সরকার চেষ্টা করেও দমন করতে পারেনি। এই বিদ্রোহের সময়ে শেখ হাসিনার প্রশাসন হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়ে আন্দোলনরত মানুষদের হত্যা করে। তবে, শেষ পর্যন্ত, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
অবশেষে, ছাত্র-জনতার সমর্থনে দেশের দায়িত্ব নেন বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার দেশের সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত দুর্নীতি, দুঃশাসন, হত্যা, গুম-খুনের বিচার শুরু হয়েছে।