নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকলেও আজমেরী ওসমান ছিলেন পুরোপুরি ধরাছোঁয়ার বাইরে। শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে অন্তত ১৬টি হত্যা মামলার অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো ত্বকী হত্যাকাণ্ড। র্যাব তার বিরুদ্ধে খসড়া চার্জশিটও দাখিল করেছিল, তবে রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে অলিখিত নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে কখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
আজমেরী ওসমান প্রয়াত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালে কেয়ারটেকার নুরুন্নবীকে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই সময় তার পরিবার চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় বসবাস করতো। এরপর ২০০০ সালে ওসমানী স্টেডিয়ামের সামনে নিজের বন্ধু আলমগীরকে হত্যা করেন আজমেরী। এছাড়া ২০০৯ সালে ১৪ টুকরো লাশ পাওয়া যায় আমলাপাড়া এলাকায়, যার সাথে আজমেরী ওসমানের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
২০১১ সালে একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটে নারায়ণগঞ্জে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অটোচালক জামাল এবং ব্যবসায়ী আশিক ইসলামের হত্যা। সেই সময় থানায় মামলা হলেও আজমেরীর নাম আসামি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
২০১৩ সালে শহরের তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানায় যে, আজমেরীর নেতৃত্বেই ত্বকীকে খুন করা হয়েছিল। একই বছর আরো কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে, যার পেছনেও আজমেরী ওসমানের নাম আসে।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি রফিউর রাব্বি, যিনি ত্বকীর বাবা, বলেন, ওসমান পরিবার একাধিক খুনের সাথে জড়িত। আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জে এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যে, সে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিত। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ত্বকী হত্যার পর নারায়ণগঞ্জে গণআন্দোলন গড়ে উঠলেও সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী সংসদে ওসমান পরিবারকে রক্ষার কথা বলেছিলেন। ফলে আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমীর খসরু বলেন, সে সময় মামলা না হলেও এখন যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের মামলা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন এবং এখন কেউ এসব ঘটনার মামলা করতে চাইলে, তাদের মামলা গ্রহণ করা হবে।