বিশ্বের বিষধর সাপের তালিকার শীর্ষ ১০-এর মধ্যে বহুল আলোচিত রাসেলস ভাইপার নেই। দেশে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম (সাপের কামড়ের প্রতিষেধক) মজুদ রয়েছে এবং সরকারিভাবে সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধটি পৌঁছানো হয়েছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা সাপটি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব কনভেনশন হলে ‘রাসেল’স ভাইপার: ফিয়ার ভার্সেস ফ্যাক্ট’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এই পরামর্শ দেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের ২৭ জেলায় রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ পাওয়া গেছে। তবে এই সাপ তেড়ে এসে মানুষকে কামড়ায় না, শুধু বিপদের ঝুঁকি দেখলেই কামড় দেয়। ২০১৩ সালে প্রথমবার সাপটির কামড়ে রোগী পাওয়া যায় এবং এর দংশনে ৭০ শতাংশ রোগী সুস্থ হচ্ছে। দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে বাকি ৩০ শতাংশ রোগীর সমস্যা হয়। বর্তমানে দেশের প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিভেনম পৌঁছানো হয়েছে এবং দেশে এন্টিভেনম তৈরির কাজও চলমান আছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “রাসেল’স ভাইপার নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। আমি সংসদ সদস্যদের নিজ এলাকার রোগীদের দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের এন্টিভেনমের কোনো সংকট নেই।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, “দেশে প্রতিদিন ৬৬৫ জনকে কুকুরে কামড়ায় এবং অনেক মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। রাসেল’স ভাইপারে কামড়ের সংখ্যা অনেক কম। আতঙ্ক না ছড়িয়ে সচেতন হতে হবে।”
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, “সাপে কাটা রোগী যদি হাসপাতালে এসে মৃত্যুবরণ করে এর দায় আমাদের। আমাদের প্রত্যেক হাসপাতালে এন্টিভেনম পৌঁছানো হয়েছে এবং চিকিৎসকরা প্রশিক্ষিত। তবে ওঝাসহ নানা কারণে রোগীরা হাসপাতালে আসতে দেরি করায় মৃত্যু বাড়ে। দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে রোগীরা ক্রিটিক্যাল অবস্থায় চলে যায় এবং ইনটেনসিভ কেয়ার সেন্টারের প্রয়োজন হয়। ক্রিটিক্যাল রোগীদের মৃত্যু রোধ করতে ইনটেনসিভ সেবা নিশ্চিত করা জরুরি।”
সেমিনারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু রেজা, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু শাহীন মো. মাহবুবুর রহমান, এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বৈজ্ঞানিক সেশনে আলোচনা করেন।