বাংলাদেশ ক্রিকেট দল রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ঐতিহাসিক টেস্ট জয় অর্জন করেছে, যেখানে তারা ১০ উইকেটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেছে। এই জয় দেশের ক্রিকেট ভক্তদের আনন্দিত করলেও ম্যাচ চলাকালীন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে শিরোনামে এসেছেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
ম্যাচের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, সাকিব বল হাতে নিয়ে ফিল্ডিং করছিলেন। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান তখন ব্যাটিংয়ে ছিলেন এবং অপস্তুত অবস্থায় ছিলেন। সাকিব হঠাৎ করেই রিজওয়ানের মাথার ওপর দিয়ে বল ছুড়ে মারেন, যা আচরণগত দিক থেকে একটি অগ্রহণযোগ্য এবং বিপজ্জনক কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। আইসিসি এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে সাকিবকে শাস্তি প্রদান করেছে। ম্যাচ ফি-এর ১০ শতাংশ জরিমানা ছাড়াও, সাকিবের নামের পাশে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে।
আইসিসির আচরণবিধির লেভেল-১ অনুযায়ী, ‘আইসিসি কোড অফ কন্ডাক্ট ফর প্লেয়ার এবং প্লেয়ার সাপোর্ট পার্সোনেল’র ধারা ২.৯ অনুসারে সাকিবকে এই শাস্তি দেওয়া হয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালে কোনো খেলোয়াড়, আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি কিংবা অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তির দিকে বল (অথবা ক্রিকেট সরঞ্জাম, যেমন একটি জলের বোতল) ছুড়ে মারা একটি অনুপযুক্ত ও বিপজ্জনক আচরণ।’ সাকিবের এই কাজকে এই ধারা অনুযায়ী মূল্যায়ন করে আইসিসি শাস্তি প্রদান করেছে।
এছাড়াও, রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুই দলই স্লো ওভাররেটের কারণে শাস্তি পেয়েছে। পাকিস্তান দল ৬ ওভার পিছিয়ে থাকার কারণে তাদের ম্যাচ ফি-এর ৩০ শতাংশ এবং বাংলাদেশ দল ৩ ওভার পিছিয়ে থাকার কারণে তাদের ম্যাচ ফি-এর ১৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। এই শাস্তি নিয়ে কোনো বিতর্ক না করে দুই দলের অধিনায়ক—বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন শান্ত এবং পাকিস্তানের শান মাসুদ—শাস্তি মেনে নিয়েছেন। ফলে, কোনো আনুষ্ঠানিক শুনানির প্রয়োজন পড়েনি।
শুধুমাত্র ম্যাচ ফি জরিমানা নয়, এই টেস্ট ম্যাচের ফলে দুই দলকেই ‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৫’ থেকে মূল্যবান পয়েন্ট হারাতে হয়েছে। পাকিস্তান দল ৬ পয়েন্ট এবং বাংলাদেশ দল ৩ পয়েন্ট হারিয়েছে। তবে পয়েন্ট হারালেও পাকিস্তানের অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি; তারা এখনও অষ্টম স্থানে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থানে কিছুটা অবনতি হয়েছে। টেস্ট জয়ের পর বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থানে উঠেছিল, কিন্তু শাস্তির পর পয়েন্ট হারানোর ফলে তারা এক ধাপ নেমে সপ্তম স্থানে চলে এসেছে। এই পয়েন্ট কাটার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে।
এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হতাশাজনক হলেও, রাওয়ালপিন্ডিতে তাদের ঐতিহাসিক জয়টি অনেক বড় সাফল্য। সাকিবের শাস্তি এবং পয়েন্ট কাটার বিষয়টি দলের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ এড়ানো যায় এবং দল আরও বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারে।