মো. ওয়াসিম (২২) ছিলেন পরিবারের জন্য আশার আলো। তিনি তার মাকে কথা দিয়েছিলেন যে, এক বছরের মধ্যেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবেন এবং পরিবারের সব দুশ্চিন্তা দূর করবেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি আর রাখতে পারলেন না ওয়াসিম। চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি। এই অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার শোকে মুহ্যমান, কেউই এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।
ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর এলাকায়। আজ মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে সংঘর্ষের সময় ওয়াসিম নিহত হন। ওয়াসিমের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, বেলা তিনটার দিকে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে লেখেন ‘চলে আসুন ষোলশহর’। কিন্তু তার তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
ওয়াসিমের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঘগুজারা বাজারপাড়া এলাকায়। তার বাবা শফিউল আলম সৌদিপ্রবাসী এবং মা জোসনা বেগম গৃহিণী। ওয়াসিম ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। তিনি মেহেরনামা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি, বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি এবং ২০১৯-২০ সেশনে চট্টগ্রাম কলেজে স্নাতকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ওয়াসিম ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
ওয়াসিমের মৃত্যুতে তার বাড়ি মেহেরনামা উচ্চবিদ্যালয়-সংলগ্ন বাজারপাড়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তাদের পাকা বাড়ির উঠানে শোকার্ত মানুষের ভিড় জমে। ওয়াসিমের চাচা রিদুয়ানুল হক আহাজারি করছেন, আর অন্যরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাড়ির ভেতরে ওয়াসিমের মা ও স্বজনদের আহাজারি চলছিল। মা জোসনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। যারা আমার ছেলেকে মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই।’
ওয়াসিমের ছোট বোন সাবরিনা ইয়াসমিনও আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ভাই কোনো অপরাধ করেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেছে। তাই বলে এভাবে মেরে ফেলতে হবে! আমার ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। চাকরি করে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে বলেছিল। একটু আগে সব শেষ হয়ে গেছে।’
ওয়াসিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাঈদী রহমানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পেকুয়া চৌমুহনীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এই মর্মান্তিক ঘটনা পুরো এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে, আর তার পরিবারের সদস্যরা ওয়াসিমের অকালমৃত্যুতে বিচার দাবি করছেন।