সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে নজিরবিহীন আকস্মিক বন্যায় ৪০টি উপজেলার ২৬০টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই বন্যায় প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন, যার ফলে তাদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত এই দুর্যোগে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, তবে কতজন নিখোঁজ আছেন তা এখনও জানা যায়নি। বন্যার পানি তলিয়ে দিয়েছে লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম এই তথ্য জানান। একই সঙ্গে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে জরুরি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে আক্রান্ত মানুষের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। এতে আরও বলা হয়, ওরাল স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন এবং অ্যান্টি-ভ্যানামসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত করা হয়েছে, যাতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখা যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুর্গত এলাকার সকল স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন, এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারির মাধ্যমে পরিস্থিতি যদি আরও অবনতি হয়, তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বন্যা-সম্পর্কিত তদারকি এবং সমন্বয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমটি একটি মোবাইল নম্বর (০১৭৫৯১১৪৪৮৮) এর মাধ্যমে দেশের সব স্বাস্থ্য স্থাপনার সঙ্গে সার্বক্ষণিক সংযুক্ত আছে। এছাড়াও সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য)-এর কার্যালয়েও কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সার্বক্ষণিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এখন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে ডুবে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লায় চারজন, কক্সবাজারে দুজন, ফেনীতে একজন, এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন। এছাড়াও, কক্সবাজারে পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া দুজনের এখনও সন্ধান মেলেনি, ফলে তাদের নিখোঁজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই দুর্যোগে আক্রান্ত অঞ্চলে পরিস্থিতি উন্নতির জন্য অবিলম্বে ব্যাপক সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। বন্যা পরবর্তী পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠন কার্যক্রমেও সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন সহায়তা প্রদানের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।