ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক **হিন্দুস্তান টাইমস**-এর খবরে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যূত ও পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী **শেখ হাসিনাকে** মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতের ওপর আইনি চাপ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটরের ঘোষণা অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালটি ২০১০ সালে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই প্রতিষ্ঠা করেছিল।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে দমন করতে গেলে সেটি ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শেখ হাসিনা সরকার ব্যাপক বলপ্রয়োগ ও দমন-পীড়ন চালায়, যার ফলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর জনতার চাপে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ আরও দেড় শতাধিক মামলা তার বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে।
ভারতের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে **ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির** অধ্যাপক প্রভাষ রঞ্জন এক নিবন্ধে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের **প্রত্যর্পণ আইন, ১৯৬২** এবং **ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি, ২০১৩** গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। চুক্তির ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তি অভিযুক্ত হলে তাকে প্রত্যর্পণ করা সম্ভব। হাসিনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগই তাকে ফেরানোর জন্য যথেষ্ট হবে, এমনকি দোষী প্রমাণিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
চুক্তির অনুচ্ছেদ ১০(৩) অনুযায়ী, গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেই প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। প্রমাণ শেয়ার করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, ২০১৬ সালের সংশোধনীতে এটি বাতিল করা হয়েছে। ফলে, বাংলাদেশ যদি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায়, তবে ভারতকে হাসিনাকে হস্তান্তর করতে হবে। তবে কিছু আইনি বাধা থাকতে পারে, যেমন চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে রাজনৈতিক অপরাধীদের প্রত্যর্পণ না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় না।
অন্যদিকে, ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি সেই ব্যক্তি অন্য কোনো অপরাধে বিচারাধীন থাকে, তবে তার প্রত্যর্পণ বাতিল করা যেতে পারে। তবে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়, কারণ তিনি ভারতে কোনো অপরাধের জন্য অভিযুক্ত নন।