অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মনিরুজ্জামান সম্প্রতি পুলিশ বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেছেন, যা দেশের পুলিশ বিভাগ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশের খুলনা-বরিশাল বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তবে, গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে তিনি তার অবসরের আবেদনপত্র জমা দেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের রিসিভ অ্যান্ড ডেসপাচ শাখা আবেদনপত্রটি গ্রহণ করেছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান তার আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন যে তিনি আর পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতে আগ্রহী নন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনী সাধারণ মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে, এবং তিনি এর অংশ হতে চান না।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, “৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর আগের কয়েক দিন এবং বিগত ১০ বছরে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের অবৈধ আদেশ পালন করতে হয়েছে। এই আদেশ পালন করতে গিয়ে অবৈধ সরকারকে রক্ষার নামে নিজেদের ক্ষমতা ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথকে দীর্ঘায়িত করার মানসে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হিংস্র ও বর্বর আদেশে শিশু-কিশোরসহ বহু মানুষকে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা হত্যা করেছেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী বর্তমানে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।”
মনিরুজ্জামানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি পুলিশ বাহিনীর বর্তমান অবস্থান ও কার্যক্রমের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছি যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে আর চাকরি করা আমার জন্য সমীচীন নয়। এ কারণে ১১ আগস্ট আমি পুলিশে আমার পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলাম।” তার এই বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে যে, তিনি পুলিশের বর্তমান ভূমিকা ও কার্যক্রমে নিজের সম্পৃক্ততাকে আর সমর্থন করতে পারছেন না।
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের এই পদত্যাগ দেশের নিরাপত্তা ও আইনি ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তার বক্তব্যে পুলিশের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি তীব্র সমালোচনা ও অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে, যা সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের সংকটকে আরও গভীরতর করেছে।
আবেদনের শেষে মো. মনিরুজ্জামান লিখেছেন, “বাংলার মানুষের ঘৃণার পাত্র হিসেবে আমি পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতে ইচ্ছুক নই। আমি চাকরি হতে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলাম। অতএব আমার এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আপনার সদয় মর্জি কামনা করছি।”
এই পদত্যাগ দেশের প্রশাসনিক ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার এই সিদ্ধান্ত দেশের পুলিশ বাহিনীর ভেতরে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে নতুনভাবে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসবে এবং পুলিশের কর্মকাণ্ড ও নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে। মো. মনিরুজ্জামানের অবসরের আবেদন শুধু তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি পুলিশের সার্বিক পরিস্থিতির প্রতিফলনও বটে, যা দেশের নিরাপত্তা ও আইনি কাঠামোর ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে।