সম্প্রতি পাকিস্তানে ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়ায় সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে অনলাইন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে মানুষজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারছেন না। অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, যেকোনো পোস্ট আপলোড করতে অস্বাভাবিকভাবে বেশি সময় লাগছে, যা তাদের দৈনন্দিন অনলাইন কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময়ও সরকার ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দিয়েছিল। সে সময় জাতীয় নিরাপত্তাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে তৎকালীন সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (যা পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত ছিল) ব্লক করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে, এবং ভিপিএন ছাড়া এক্স-এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। এবার, শুধুমাত্র এক্স নয়, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, এবং ইনস্টাগ্রামও ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এবারের ইন্টারনেট সমস্যার কারণ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া না হলেও, বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে যে ‘ফায়ারওয়াল’ নামের একটি বিশেষ নিরাপত্তা সফটওয়্যারের ত্রুটিপূর্ণ ইনস্টলেশনের ফলে ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার জুলাই মাসের শেষ দিকে ঘোষণা দেয় যে, দেশের ইন্টারনেট পরিষেবাকে আরও উন্নত ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে ‘ফায়ারওয়াল’ সফটওয়্যার ইনস্টল করা হবে। ইনস্টলেশনের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ১৪ই আগস্টকে, যেদিন পাকিস্তান বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া সংবাদের প্রবাহ রোধ করা। গত মাসে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (পিটিএ)-এর এক কর্মকর্তা জানান, সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া সংবাদের প্রবাহ ঠেকাতে এই ফায়ারওয়াল সফটওয়্যার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু এই ফায়ারওয়াল ইনস্টলেশনের পর থেকেই দেশের ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে সাধারণ মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনলাইন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরাও। ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য এবং সেবার প্রচার ও বিপণন করতে পারছেন না, যার ফলে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। অনলাইন ক্লাস, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, এবং অন্যান্য ডিজিটাল পরিষেবাগুলোতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থা এবং সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা না দেওয়া হলেও, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার দাবিতে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। ইন্টারনেটের এই দুরবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে তার প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ আশা করছে যে, সরকার দ্রুততার সঙ্গে ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান করবে এবং ফায়ারওয়াল সফটওয়্যারটির কার্যকারিতা পুনর্বিবেচনা করবে। একদিকে, ইন্টারনেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখাও জরুরি। ফলে, একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং কার্যকর সমাধানের মাধ্যমে দেশের ইন্টারনেট পরিষেবাকে পুনরুদ্ধার করার তাগিদ বাড়ছে।