দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ছাত্র-জনতা যখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, তখন তাদের পাশে ছিলেন দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে অবৈধ সরকারের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করার মাধ্যমে এই লড়াইকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এবার, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর, প্রবাসীরা আবারও নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছেন। তারা বন্যার্তদের সাহায্যে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের চলমান সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কিছুটা কমে গেলেও, সরকার পতনের পর তা আবার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। মাসের প্রথম ২৪ দিনে বৈধ পথে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭১ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৪ থেকে ১০ অগাস্টের মধ্যে এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, ১১ থেকে ১৭ অগাস্ট পর্যন্ত ৬৫ কোটি ১৪ লাখ মার্কিন ডলার এবং ১৮ থেকে ২৪ অগাস্ট পর্যন্ত এসেছে ৫৮ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, অগাস্ট মাসের প্রথম ২৪ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ১৫ লাখ ৯৭ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এ সময়ে ২৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৩৭ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
অগাস্ট মাসের এই রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। গত বছরের অগাস্টের প্রথম ২৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩২ কোটি মার্কিন ডলার, যা বর্তমান বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৯১ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে, জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত প্রতিটি মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, ১৯৩ কোটি, ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবসময়ই দেশের সংকটময় সময়ে নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ শুধু দেশের অর্থনীতিকে সমর্থন দিচ্ছে না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তি জুগিয়েছে।
/কালের কন্ঠ