একদা বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়ায় রাজনৈতিক কার্টুন একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছিল। রফিকুন নবী (রনবী) এবং শিশির ভট্টাচার্যের মতো কার্টুনিস্টরা পত্রপত্রিকায় নানা রাজনৈতিক অসংগতি ও সামাজিক বৈষম্য তুলে ধরতে ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করতেন। সেই কার্টুনগুলো কেবল মজার খোরাক ছিল না, বরং সমাজ এবং রাষ্ট্রের গূঢ় বিষয়গুলোর উপর সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করত। পাঠকেরা এই কার্টুনগুলো দেখার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করতেন এবং সেগুলো জনগণের মতামত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। শাসকগোষ্ঠীর জন্য রাজনৈতিক কার্টুন ছিল একটি আতঙ্কের নাম, কারণ তা তাদের ভুল ধরিয়ে দিতো এবং তারা প্রায়ই নিজেদের ভুল সংশোধন করতে বাধ্য হতেন।
কিছু সময়ের জন্য রাজনৈতিক কার্টুনের প্রচলন হ্রাস পেয়েছিল। মনে হচ্ছিল, সরকার এই কার্টুনের ব্যঙ্গ সহ্য করতে পারছে না। এমনকি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের মতো শিল্পীরা কার্টুন আঁকার জন্য নির্যাতনের শিকার হন। সম্প্রতি, বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মাধ্যমে একটি অভ্যুত্থান ঘটেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার পতনের ১ দফা আন্দোলনে রূপ নেয়ার পর গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সময় ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসে, শহরের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি দেখা যায় এবং মিছিলের গান ও স্লোগান শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের তুলির আঁচড় যেন হয়ে উঠেছিল পায়রার ডানা।
এই নতুন জাগরণের সময় কার্টুনিস্টরা আবার সাহস পেয়েছেন। ৭ আগস্ট কার্টুনিস্ট মেহেদী হক একটি কার্টুন আঁকেন যা জাপানিজ হরর ফিল্ম ‘দ্য রিং’-এর একটি আইকনিক দৃশ্য অবলম্বনে তৈরি। কার্টুনটিতে অশরীরীর জায়গায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বসানো হয়, যা বোঝাতে চেয়েছে তিনি হয়তো দেশে ফিরে আসতে পারেন এবং রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন।
তবে তারেক রহমান এই কার্টুনটিকে অত্যন্ত সহনশীলতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তার ভেরিফায়েড পেজ থেকে পোস্ট করে তিনি বলেছেন যে তিনি আনন্দিত যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কার্টুন আঁকার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ২০০৬ সালের আগে শিশির ভট্টাচার্য প্রায়ই তার মা খালেদা জিয়া এবং তাকে নিয়ে কার্টুন তৈরি করতেন।
তারেক রহমান আরও লেখেন, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ আরও অনেকে তাদের কাজের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি কার্টুনিস্ট মেহেদী এবং শিশির ভট্টাচার্যের কাজের ভক্ত এবং আশা করেন তারা নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক কার্টুন তৈরি করবেন।
তারেক রহমানের এই সহনশীল মানসিকতার জন্য নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসছেন। অনেকেই তার এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করছেন এবং বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরছেন। ফাতেহা নুর এবং রাকিব হোসেনের মতো অনেকে মন্তব্য করেছেন যে বাকস্বাধীনতা এবং গ্রহণযোগ্যতার মানসিকতা দেশের জন্য সুস্থ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে। এটি একটি নতুন আশা জাগাচ্ছে যে রাজনৈতিক কার্টুন আবারও দেশে স্থান করে নেবে এবং তা জনগণের মতামত ও সমালোচনাকে শক্তিশালী করবে।