ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে, যা নগরবাসীর জন্য ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা এই বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ। এর আগে প্রি-মনসুনে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৭ মে ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোর রাতে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিতে সকালেই অনেক জায়গায় পানি জমে যায়। দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর দেড়টার দিকে কিছু জায়গায় সূর্যের দেখা মিললেও আবার মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারাদিন ও রাতেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে, তবে আগামীকাল থেকে বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা কমবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় মানুষ কম ছিল, বৃষ্টির কারণে অনেকেই বের হননি। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন তারা বিপাকে পড়েছেন। অনেক জায়গায় ঘর থেকে বের হয়েই কোমর পানি। নৌকার বিকল্প হিসেবে রিকশা ব্যবহার করতে হচ্ছে, যার ভাড়াও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
ছুটির দিন হলেও চাকরির পরীক্ষার্থী, দিনমজুরসহ যারা বের হয়েছেন তাদের হাঁটু সমান পানি পাড়ি দিয়েই গন্তব্যে যেতে হয়েছে। রাজধানীর গ্রিনরোড, মিরপুর, ধানমন্ডি, বনানী, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ-মগবাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বাংলা মোটর, বাড্ডা, আজিমপুর এলাকাগুলো পানির নিচে চলে গেছে।
ধানমন্ডি ২৭, গ্রিনরোড, মিরপুর ও মগবাজার এলাকার প্রধান সড়কসহ প্রায় সব অলিগলিতে হাঁটু থেকে কোমর পানি জমেছে। এতে পথচারীরা যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন, তেমনি প্রাইভেটকার ও সিএনজির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অনেক গাড়ি রাস্তার মাঝে আটকে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে গাড়ির ধীর গতির কারণে যানজটও তৈরি হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে অনেক দোকান ও মার্কেটে পানি ঢুকেছে। নিউমার্কেটের নিচতলার বেশ কিছু দোকানে পানি উঠার খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানিয়েছেন, ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং সারাদিনই বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমবে।
আবহাওয়া বার্তায় জানা গেছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলসহ আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে এবং এর একটি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। ফলে দেশের সব বিভাগেই আজ বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণও হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে ৩০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সবচেয়ে বেশি। ভারি বৃষ্টির কারণে সেখানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে, যাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ২১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সিলেটসহ উত্তরবঙ্গে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ৩০ মে টেকনাফ উপকূলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা পৌঁছায়, যা বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয়বাষ্প নিয়ে আসে। এর প্রভাবে মেঘ সৃষ্টি হয় ও বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়। অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকলে সারাদেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে।