পাভেল দুরভ, যিনি জনপ্রিয় ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উত্তরাঞ্চলীয় একটি বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। এই গ্রেপ্তারটি ঘটে যখন তার প্রাইভেট জেট লে বোর্গেট বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফ্রান্সের স্থানীয় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার সময়, কর্মকর্তারা জানান যে এটি একটি বিশেষ ওয়ারেন্টের অধীনে করা হয়েছে, যা টেলিগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধের তদন্তের জন্য জারি করা হয়েছিল। ৩৯ বছর বয়সী দুরভকে এই অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে যে, ফ্রান্সে অবস্থিত রাশিয়ার দূতাবাস এই ঘটনার পর পরিস্থিতি পরিষ্কার করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল টিএফ১-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুরভ তার ব্যক্তিগত জেটে ফ্রান্সে এসেছিলেন। তবে তিনি ফ্রান্সে কেন এসেছিলেন এবং তার গ্রেপ্তারের পেছনে আসল কারণ কী, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
পাভেল দুরভ টেলিগ্রাম অ্যাপটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এটি দ্রুতই সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষত রাশিয়া, ইউক্রেন এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। টেলিগ্রাম অ্যাপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটির প্রতি উচ্চ গুরুত্বারোপ। এর প্রভাবশালী এনক্রিপশন এবং ব্যবহারকারীর ডেটার ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে এটি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে।
টেলিগ্রাম অন্যান্য জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, এবং উইচ্যাটের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে। তবে টেলিগ্রামের পথচলা খুবই সহজ ছিল না। রাশিয়ার সঙ্গে এর সম্পর্ক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৮ সালে, টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীর ডেটা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করায় রাশিয়ায় অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হয়। রাশিয়ার সরকারের দাবি ছিল, টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত বার্তা সরকারি নিরাপত্তা সংস্থার হাতে তুলে দিতে হবে। কিন্তু দুরভ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন, যা তাকে সরকার ও আইনের সাথে সংঘর্ষে নিয়ে আসে। অবশেষে, ২০২১ সালে রাশিয়া এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে, এবং টেলিগ্রাম আবার রাশিয়ার বাজারে ফিরে আসে।
পাভেল দুরভের গ্রেপ্তার তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির জন্য নতুন একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। টেলিগ্রাম ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে সরকার এবং আইনের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এই ঘটনার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুরভ এবং তার কোম্পানির প্রতি সরকারের মনোভাব কী হবে, তা নিয়ে নতুন প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। তার গ্রেপ্তারের পেছনে যে অভিযোগগুলো আছে, তা যদি প্রমাণিত হয়, তবে এটি টেলিগ্রামের ভবিষ্যৎ এবং বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহারকারীদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এই ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে প্রচার মাধ্যম এবং টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দুরভের গ্রেপ্তারের বিষয়টি একদিকে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি করছে, অন্যদিকে টেলিগ্রামের মতো প্রাইভেসি-অরিয়েন্টেড প্ল্যাটফর্মগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এখন পর্যন্ত, ফরাসি এবং রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা সম্পর্কে কোন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে পাভেল দুরভের মতো একজন প্রভাবশালী প্রযুক্তি উদ্যোক্তার গ্রেপ্তার অবশ্যই টেলিগ্রামের উপর এবং বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি সম্প্রদায়ের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।