নোয়াখালী জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে গত একমাসের টানা বর্ষণ, অপর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং খাল দখলের ফলে। এমনকি জেলার অনেক সরকারি দপ্তরেও পানি ঢুকে পড়েছে। সর্বশেষ সাত দিনের টানা বৃষ্টির ফলে আবারও পৌর এলাকা প্লাবিত হয়েছে, শহরের প্রধান সড়কগুলোসহ বেশিরভাগ বাসাবাড়ির আঙিনায় পানি জমে রয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) মাইজদীর বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ঘুরে দেখা যায়, জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচতলা, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, প্রেসক্লাব, রেডক্রিসেন্ট, বিআরডিবি, বিদ্যুৎ অফিস, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম, বন বিভাগের বাংলো এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়ক, মহিলা কলেজ সড়ক এবং মাইজদী বাজার সড়কসহ শহরের বিভিন্ন প্রধান সড়কগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। ফলে দৈনন্দিন কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষ চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কখনো কখনো কিছু ড্রেনের কাজ করা হলেও সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হালকা বৃষ্টিতেও ড্রেনগুলো থেকে পানি নামতে দীর্ঘ সময় লাগে।
এদিকে, নোয়াখালী সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২৬ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় মাছচাষিরা জানিয়েছেন, জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে থাকা ২৫-২৭টি মাছের প্রজেক্ট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সপ্তাহব্যাপী এই বন্যার কারণে বহু পরিবারের রান্নাঘরসহ চুলা পর্যন্ত ডুবে যাওয়ায় নেওয়াজপুর ও চর উরিয়ার ৭০০ থেকে ১,০০০ মানুষ শুকনো খাবার খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন। খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া গবাদিপশু পালনকারীরাও বিপাকে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। ত্রাণ সহায়তা অবিলম্বে প্রয়োজন।
জেলার ৯টি উপজেলাতেও একই রকম পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষকদের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত করতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় শ্রেণি কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে এবং কোমলমতি শিশুদের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসতে হচ্ছে, যা যেকোনও সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং পানি কমে গেলে প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, বন্যাদুর্গতদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।