বাংলাদেশের নাট্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় নাটক “কোথাও কেউ নেই” এর কেন্দ্রীয় চরিত্র বাকের ভাইয়ের অভিনয়শিল্পী আসাদুজ্জামান নূরকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের নওরতন কলোনি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “মিরপুর থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে তোলা হবে।” তবে, এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য বা আসাদুজ্জামান নূরের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে এখনও কোনও নির্দিষ্ট বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি।
আসাদুজ্জামান নূর একজন গুণী নাট্য অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তবে তার রাজনৈতিক পরিচিতিও কম নয়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে টানা নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সংস্কৃতিমন্ত্রী হন এবং এ দায়িত্ব পালন করেন।
তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলন সরকারবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের চাপের মুখে পদত্যাগ করেন এবং দেশ ত্যাগ করেন। এরপরে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসাদুজ্জামান নূরের গ্রেপ্তার সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ২৭ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা এবং শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করা হলো।
আসাদুজ্জামান নূর একজন জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং তার অভিনীত চরিত্র ‘বাকের ভাই’ এখনও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে আছে। “কোথাও কেউ নেই” নাটকের বাকের ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ডের সময় মানুষের এতোটাই আবেগপ্রবণ হয়েছিল যে, তারা রাস্তায় নেমে বাকের ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল। সেই অভিনেতাকে আজ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হলো, যা অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে।
আসাদুজ্জামান নূরের রাজনৈতিক জীবনে সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে তার ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তার গ্রেপ্তার দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।