কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সদস্যকে মেরে বস্তায় মুড়িয়ে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছিল ছাত্রলীগ। ভিক্টিমের হুবহু বক্তব্য। “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় ব্যাচের গণিত বিভাগের ছাত্র ছিলাম। শিবিরের সদস্য ছিলাম। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ১০৪ নং রুমে থাকতাম। ২০১১ সালের নভেম্বর মাস। রাত দশটায় আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সাধারণত রাত আটটা-নয়টার পর ঘুমিয়ে পড়ি । আমার রুমে কয়দিন পরপর ছাত্রলীগের ছেলেরা আসত। আমরা তাদেরকে আপ্যায়ন করাতাম যতটুকু সৌজন্যবোধ রক্ষা করা দরকার রক্ষা করতাম। প্রতিদিনের মত সেদিন শুধুমাত্র তাওহীদ ভাই রুমে আসে। এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। তখন আমি বললাম ভাই আপনারা আর একটু আগে আসতে পারেন না! আমার ঘুম পায়। আমি রাত জাগতে পারি না। তখন আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। একটু পর তাওহীদ ভাই আবার আমাকে ডাক দিয়ে বলে, সাইফুল! একটু কথা আছে, উঠ। আমি ঘুম থেকে উঠলাম। তারপর বলে, একটু বাহিরে আয়। যেহেতু এরা আমার পরিচিত প্রায় কয়েকদিন পরপরই আসত তাই আমি অনেকটা নির্ভাবনায় ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে তাওহীদ ভাইয়ের সাথে বের হই। তখনি আমার রুমমেট মাহবুব মিয়াজী ভাই, রাফিউল কাদের ভাই, ফখরুল ভাইয়ের মোবাইল নিয়ে নেয়। পাশের রুমে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আমি লক্ষ লক্ষ্য করি , জাহিদ জুয়েল (ইংরেজি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কুবি) ফখরুল পারভেজ (গণিত বিভাগ), মাসুদুর রহমান (লোকপ্রশাসন, বর্তমানে কুবির প্রশাসনিক কর্মকর্তা), ফাহিম (ইংরেজি), ইমরান আলীর ( মার্কেটিং) নেতৃত্বে প্রায় দুই হলের (নজরুল হল সহ) একশো জনের অধিক ছাত্রলীগের গুণ্ডা বাহিনী লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের পূর্ব দক্ষিণ পার্শ্বে। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারি নাই। আমাকে বলল সাইফুল একটু কথা আছে বাহিরে আয়। আর এসে দেখি একজন মানুষকে মারার জন্য হিন্দুর পাঠা বলি দেওয়ার মত বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। তখন তওহীদ, পারভেজ, ফাহিম আমাকে সবার ভীড় থেকে ধরে একেবারে সবার মাঝখানে নিয়ে যায়। প্রায় শতাধিক ছাত্রলীগ ক্যাডারের মধ্যে আমার দুই হাত দুইজন করে চার জনে ধরে ফেলে। তাওহীদ শার্টের কলার চেপে ধরে বলে, তোকে হল ছেড়ে দিতে হবে। আমাকে বলল, তোকে আমরা বিশ্ব রোড পদুয়ার বাজার পর্যন্ত দিয়ে আসি তুই চৌদ্দগ্রাম চলে যা। আমি বললাম, আমি তৃতীয় সেমিস্টার শেষ করেছি মাত্র, আমি যাব কেন? তারপর বলে তুই হল ছেড়ে যা, আমি বললাম আমি যেতে পারবনা। তখন তারা হতচকিত হয়ে পড়ে। আমাকে এই অবস্থায় রেখে তাওহীদ ভাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মাছুম ভাইকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত কথা বলে, আমাকে মাছুম ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে বলে। আমি বললাম আমি ওনার সাথে কি কথা বলব। পরে তাওহীদ ভাই মোবাইল নিয়ে একটু দূরে চলে যায়। মাছুমের ভাইয়ের সাথে কথা বলে। এ অবস্থায় অনেক্ষণ কেটে যায়। তারপর হঠাৎ ফাহিম আমাকে ঘুষি মারে। তারপর তারা আমার হাত-বেঁধে ফেলে আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর পারভেজ, জাহিদ, তাওহীদ আমার শরীরের উপরে উঠে নৃত্য করতে থাকে। এভাবে অনেক্ষন আমাকে পা দিয়ে লাথি ও বুকের উপর উঠে নৃত্য করার পর লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। এরপর বস্তায় আমাকে ঢুকিয়ে ফেলে এরপর তারা আমাকে ধীরেন্দ্রনাথ হলের উত্তর পার্শ্বের পাহাড়ে নিয়ে বলে যা তুই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ এই বলে উপর থেকে একেবারে নীচে ফেলে দেয়। এভাবে আমাকে নীচে ফেলে তারা চলে যায়। আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন তাই উছিলা করে দিয়েছিলেন। অনেক্ষণ পর গভীর রাতে এলাকার লোকজন আমাকে উদ্ধর করে। আমাকে দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হয়েছে। এভাবে নির্যাতনের ইতিহাস রচনা করেছিল আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ। আর কতিপয় শিক্ষকদের আকার ইঙ্গিতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাস মোবাইল ছিনতাই, হলে ফ্রি খাওয়া, আর মদ গাঞ্জহার ব্যবসায়ীক সেন্টার তৈরি করেছিল। আমি নির্যাতনের বিচার চাই, আর কেউ যেনো এমনভাবে নির্যাতিত না হয়, এটা সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।”
মু.সাইফুল ইসলাম (ভুট্টো)
গণিত বিভাগ,
৩য় ব্যাচ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়