বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যা ইসলামি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের মধ্য দিয়ে ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে। এই পদক্ষেপ ব্যাংকিং খাতের আলোচিত ও সমালোচিত প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের প্রতিনিধিদের সরিয়ে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব স্থাপনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নতুন গঠিত পরিচালনা পর্ষদে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ছাড়াও আরও কয়েকজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক খুরশীদ ওহাব, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক এম মাসুদ রহমান এবং চার্টার্ড একাউন্টেন্ট আব্দুস সালাম। এই নিয়োগগুলো ব্যাংকটির সুশাসন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে, যেখানে বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এই পরিবর্তনের পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) তিনি এই নতুন নিয়োগ অনুমোদন করেছেন। এটি দেশের ব্যাংকিং খাতে অন্যতম আলোচিত ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের প্রভাব নিয়ে চলমান সমালোচনার অবসান ঘটাতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক, যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যাংক হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি বেশ কিছু বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বিশেষত, এস আলম গ্রুপের দ্বারা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বিশেষ প্রভাব বিস্তার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এই গ্রুপের প্রতিনিধিদেরকে ইতোমধ্যে ব্যাংকটির শীর্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে পরিচালনা পর্ষদে তাদের উপস্থিতি এখনও ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন সিদ্ধান্ত এস আলম গ্রুপের সব প্রতিনিধিকে পুরোপুরি সরিয়ে দিয়েছে, যা ব্যাংকটির পরিচালনায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং নৈতিক মান নিশ্চিত করতে চায়। ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ইসলামী ব্যাংকের জন্য নতুন পথের দিশারী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাদের দায়িত্ব হবে ব্যাংকটির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা, যা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা নড়বড়ে হয়েছিল।
এই পরিবর্তনগুলি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতির একটি অংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই নতুন পর্ষদ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং ব্যাংকটির ভেতরে ও বাইরে চলমান সব অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে ব্যাংকটির সুনাম পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাবে। ব্যাংকটির গ্রাহক এবং অংশীদাররা নতুন নেতৃত্বের অধীনে ব্যাংকের স্থিতিশীলতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে আশাবাদী হতে পারেন।