ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদাদো সম্প্রতি নতুন রাজধানী নুসানতারায় প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন, যা দেশটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সোমবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠক ইঙ্গিত দেয় যে ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্রটি জাকার্তা থেকে নুসানতারায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নের পথে।
জাকার্তা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ, তীব্র যানজট এবং বায়ুদূষণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীর তালিকায় জাকার্তার নাম উঠে আসার পর সরকার এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে উদ্যোগী হয়। এর ফলে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদাদো জাকার্তার ওপর চাপ কমাতে নতুন রাজধানী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানায় এবং ২০২২ সালের মাঝামাঝি বোর্নিও দ্বীপে নুসানতারার নির্মাণকাজ শুরু হয়।
নুসানতারা নির্মাণ প্রকল্পটি ছিল একসময় ঘন অরণ্যে ঘেরা একটি এলাকায়। সরকার এই প্রকল্পে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। নুসানতারার স্থান নির্বাচন করা হয় বোর্নিও দ্বীপের এমন একটি এলাকায়, যা পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং যেখানে নতুন একটি রাজধানী গড়ে তোলার মতো পর্যাপ্ত জমি পাওয়া সম্ভব।
মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক শুরুর আগে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইদাদো। তিনি বলেন, “আজ আমরা দেশের ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায় খোলার সাক্ষী হতে চলেছি। আমাদের নতুন রাজধানী নুসানতারা হলো এমন একটি ক্যানভাস, যেখানে আমরা আমাদের জাতির ভবিষ্যতের খসড়া প্রস্তুত করতে পারি। একদম শূন্য অবস্থা থেকে একটি নতুন রাজধানী গঠনের ইতিহাস সব দেশের নেই।” তার এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি নুসানতারাকে শুধু একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, বরং ইন্দোনেশিয়ার ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে দেখতে চান।
ইন্দোনেশিয়ার সংবিধান অনুসারে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারেন। ‘জোকেউই’ নামে পরিচিত জোকো উইদাদো টানা দুই মেয়াদে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কার্যকাল শেষ হচ্ছে আগামী অক্টোবর মাসে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, এবং সেই নির্বাচনে প্রবাও সুবিয়ান্তো জয়ী হয়েছেন। উইদাদোর বিদায়ের পরই নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক ঘটবে সুবিয়ান্তোর।
সোমবারের বৈঠকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট প্রবাও সুবিয়ান্তোও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নুসানতারার অবকাঠামোগত কাজ নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, “নুসানতারার অবকাঠামোগত কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। আমি সরকার গঠন করার পর এই কাজটিকে অগ্রাধিকার দেব।” তিনি আরও বলেন, “খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি শেষ করা সম্ভব নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং কঠিন কাজ।” তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে নুসানতারার নির্মাণকাজ শেষ করতে এখনও অনেকটা পথ বাকি রয়েছে এবং এটি সম্পন্ন করতে নতুন সরকারের পূর্ণ সমর্থন প্রয়োজন হবে।
নুসানতারার নির্মাণকাজ যে শুধু একটি নতুন শহর গড়ে তোলার প্রকল্প নয়, তা প্রেসিডেন্ট উইদাদোর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। এটি ইন্দোনেশিয়ার জাতির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই, আধুনিক এবং পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। নতুন রাজধানী নুসানতারায় প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক ইন্দোনেশিয়ার জন্য একটি মাইলফলক এবং দেশের নতুন দিকনির্দেশনার সূচনা।
নুসানতারার মতো একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সময় এবং সমন্বয়ের প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট উইদাদো এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তো উভয়ই এই প্রকল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং এটি সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নুসানতারা কেবল একটি নতুন প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, এটি ইন্দোনেশিয়ার আধুনিক উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক মঞ্চে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হবে।
/ রয়টার্স