ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফিকুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আজ রোববার প্রথম কার্যদিবসে সকাল ১০টায় সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আসেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সেখানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি আলোচনায় আসে। নাহিদ ইসলাম এ সময় বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং আন্দোলনের সময় এতে মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় শেখ হাসিনা সরকার। পাঁচ দিনের মাথায় ২৩ জুলাই সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয় এবং ১০ দিন পর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট পুনরায় চালু হয়। এরপর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের সময় আবারও মোবাইল অপারেটররা ফোর-জি নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করে দেয় সরকারের নির্দেশে।
আজকের বৈঠকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ কারা দিয়েছিল, তা বের করা জরুরি। তিনি মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির যেসব কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে ইন্টারনেট বন্ধে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে অনেক তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। কত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, তাও নির্ধারণ করা যায়নি।
এই নির্দেশের পরপরই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) এ কে এম আমিরুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটি গঠনের পর সদস্যরা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, তাঁরা আগামীকালের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপদেষ্টার কাছে জমা দেবেন এবং পরে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
বৈঠকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, দেশে ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম অত্যন্ত বেশি এবং তা কমানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের কিছু কিছু স্থানে এখনো মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হয়নি, যা দ্রুত স্বাভাবিক করারও নির্দেশ দেন।
বৈঠকে তিনি আমলাতন্ত্রের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকার পরামর্শ দেন এবং বলেন, কর্মকর্তারা যেন নিরপেক্ষভাবে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করেন। ছাত্র-জনতার ত্যাগ ও রক্তদানের মাধ্যমে যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি কাজে লাগিয়ে কাঠামোগত সংস্কার করার আহ্বান জানান তিনি, যাতে দেশ দীর্ঘমেয়াদে সুফল পেতে পারে। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এখন থেকে মেধাভিত্তিকভাবে পরিচালিত হবে এবং দুর্নীতির কোনো স্থান থাকবে না।
বৈঠকের শুরুতে মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফিকুর রহমান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তবে মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য সংস্থা থেকে ফুল দিতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।